আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা করো।
ইউরোপে রেনেসাঁ যুগের একজন বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দে ইটালির পিসা শহরে এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। জ্যোতির্বিদ্যার পাশাপাশি গণিত ও পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। এ কারণে অনেকেই তাঁকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করেছেন।
সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা প্রমাণ:
সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা প্রমাণ:
কোপারনিকাস যুক্তি ও তথ্যের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন যে, সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলি তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে। তাঁর এই সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা-কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অধিকাংশ মানুষই সে যুগে মেনে নেয়নি। কিন্তু তাঁর এই সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন গ্যালিলিও।
দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার:
জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চাকে একলাফে অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল গ্যালিলিওর আবিষ্কৃত প্রতিসরণ টেলিস্কোপ। এই যন্ত্রের প্রায় তিরিশ গুণ বিবর্ধন ক্ষমতা ছিল, যা দিয়ে মহাকাশের সমস্ত জ্যোতিষ্ককে সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
অন্যান্য আবিষ্কার:
দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে তিনি জানান চাঁদের গায়ে দাগগুলি আসলে গর্ত ও পাহাড়। একইভাবে গ্যালিলিও বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন এবং শুক্রগ্রহের কক্ষপথ আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া বলবিজ্ঞান, গতির্বিদ্যা নিয়ে তাঁর চর্চা ও পর্যবেক্ষণ পরবর্তীতে বিজ্ঞানী নিউটনকে প্রভাবিত করেছিল।
গ্রন্থরচনা:
গ্যালিলিও রচিত 'Dialogue Concerning the Two New Chief Systems of the World' গ্রন্থে তিনি মহাবিশ্বের গঠন নিউটনের টেলিস্কোপ যন্ত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর বর্ণনা বাইবেল বর্ণিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্বকে নস্যাৎ করেছিল। অপর গ্রন্থ 'Dialogue on the Two Systems of the World'-এ তিনি কোপারনিকাস মডেলকে দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেন।
চার্চ বিরোধিতায় অভিযুক্ত:
১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে গ্র্যান্ড ডাচি অফ ক্রিস্টিনাকে লেখা মহাবিশ্বের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদকে ব্যাখ্যা করা একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে, তাঁর বিরুদ্ধে বাইবেলকে অস্বীকার করার অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘকালীন বাদানুবাদের পর ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন রোমান ইনক্যুইজিশন (ধর্ম আদালত) তাঁকে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। তাঁর সমস্ত বই নিষিদ্ধ করা হয়। গ্যালিলিওকে চাপের মুখে পোপের সামনে নতজানু করে স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয় যে, তিনি যা কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন, সেগুলি সব ভুল বাইবেল-এ যা লেখা আছে তাই-ই ধ্রুবসত্য। অবশেষে নির্জন গৃহে অন্তরিন অবস্থায় শেষজীবনে অন্ধ হয়ে যাওয়া এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।
মূল্যায়ন:
গ্যালিলিওর মৃত্যুর বেশ কিছুকাল পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত যাবতীয় তত্ত্ব সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত হয় বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন দ্বারা। এভাবেই গ্যালিলিওর সারাজীবনের বিজ্ঞানসাধনা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য উৎসর্গীকৃত হয়েছিল। তাঁকে অনেকেই আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলেও অভিহিত করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা করো।"